আওয়ামী লীগ নেতার দখলকৃত জমি উদ্ধার করলেন ম্যাজিস্ট্রেট রাসেল ইকবাল
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশালঃ বরিশাল গণপূর্তের সাড়ে ৯ একর জমি অবশেষে আওয়ামী লীগ নেতাদের কবল থেকে দখলমুক্ত হয়েছে। রোববার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাসেল ইকবালের নেতৃত্বে সদর উপজেলার তালতলী বাজারে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে ওই জমি উদ্ধার করা হয়।
এ সময় ৮৮টি আধাপাকা ও কাঠের স্থাপনা বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। উচ্ছেদ হওয়া ঘরগুলোতে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও ছিল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কার্যালয়।
জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও চরবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহতব হোসেন সুরুজের নেতৃত্বে সাড়ে ৯ একর জমি দখল করা হয়েছিল। সেখানে আধাপাকা স্থাপনা নির্মাণ করে মাছবাজার, বালুখোলাসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া দেওয়া হয়। তবে উচ্ছেদ হওয়া ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, চেয়ারম্যান মাহতব হোসেন সুরুজের অতিলোভের কারণে এখন তাদের পথে বসতে হয়েছে।
চার বছর ধরে এ দখল কার্যক্রম চললেও গণপূর্তের বরিশালের নির্বাহী প্রকৌশলী ছিলেন রহস্যজনকভাবে নীরব। এ নিয়ে গত ২ নভেম্বর সমকালের শেষ পৃষ্ঠায় ‘বরিশালে গণপূর্তের জমিতে আ’লীগ নেতাদের মার্কেট’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর পরই গণপূর্তের কেন্দ্রীয় দপ্তরের চাপের মুখে জমি দখলমুক্ত করতে তৎপরতা শুরু হয়।
দাপ্তরিক সব প্রস্তুতি শেষে গতকাল সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত উচ্ছেদ কার্যক্রম চলে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার এলাকায় মাইকিং করে দখলদারের স্বেচ্ছায় স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। গতকাল সরেজমিন দেখা গেছে, আলটিমেটাম পেয়ে প্রায় সব ব্যবসায়ী তাদের মালপত্র সরিয়ে নিয়েছেন। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কার্যালয় ৩টি ছাড়া অন্যান্য আধাপাকা স্থাপনা স্বেচ্ছায় ভেঙে দিয়েছেন দখলদাররা। গতকাল সকালে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে মূলত ওই ৩টি কার্যালয় উচ্ছেদ করা হয়।
বরিশাল গণপূর্তের নির্বাহী ম্যজিস্ট্রেট জেড়াল্ড অলিবার গুদা জানান, দখলকৃত জমিতে মোট ৮৮টি আধাপাকা ও কাঠের স্থাপনা ছিল। তার মধ্যে ৭৫টি ছিল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। অবশিষ্ট ১৩টিতে ছিল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কার্যালয় এবং বসতঘর। উচ্ছেদ শেষে সেখানে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সেখানে গণপূর্তের আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হবে।
গণপূর্তের জমিতে ডেরা তুলে হোটেল ও চটপটির দোকান চালাতেন জয়দেব ও শহিদুল ইসলাম। গতকাল উচ্ছেদ কার্যক্রম চলাকালে এ দু’জন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পরিত্যক্ত এ জমিতে অস্থায়ী ঘর তুলে তারা বহু বছর ধরে ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করছিলেন। ৩-৪ বছর আগে ওই জমিতে চোখ পড়ে চেয়ারম্যান সুরুজের। তিনি ও তার ভাই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি গোলাম কবির পুরো জমিতে আধাপাকা স্থাপনা করে ব্যবসায়ীদের কাছে ভাড়া দিয়ে লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য করেন। এ জন্যই প্রশাসনের নজরে পড়ে এখন সবাইকে উচ্ছেদ হতে হয়েছে।