“এ শোক নয় সহিবার, এমন মৃত্যুর শোক সইতে কি পারবে তার পরিবার!”
আধো বোলে শেখা বাবা বলে আর ডাকা হবেনা ওহি’র। গত ২৩ জুন জন্মদিনে ওহি যখন বাবার কোলে, তখন বাবার মুখের পানে চেয়ে কিছু বলতে চেয়েছিল। কিন্তু কথাগুলো তার শব্দভাণ্ডারে না থাকায় বলতে পারেনি। আর কখনও বলাও হবেনা। বাবার বন্ধুরা অবশ্য তাকে জুনিয়র কিবরিয়া বলেই ডাকতেন। দেখতে ঠিক কিবরিয়ার মত ওহি। বাবা সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়া ও মা সার্জেন্ট মৌসুমীর সুখের সংসারে তার আগমন দু’বছর আগে।
গতকাল ১৫ জুলাই সকালে কিবরিয়ার বাসা থেকে বের হওয়ার সময় ওহি ছিল ঘুমে। তাইতো ওহি শেষবারের মতো বাবা বলে ডাকতে পারেনি। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার জিরো পয়েন্টে দায়িত্বরত ছিলেন কিবরিয়া। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে পটুয়াখালীগামী বেপরোয়া গতির একটি কাভার্ডভ্যানকে থামার সংকেত দেন তিনি। সংকেত অমান্য করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে মোটরসাইকেলে ধাওয়া করে কাভার্ডভ্যানের সামনে গিয়ে ফের থামার সংকেত দেন। কিন্তু চালক না থেমে সার্জেন্ট কিবরিয়াকে চাপা দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয় লোকজন তাঁকে শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। অবস্থার অবনতি হওয়ায় একটি বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে এনে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ ১৬ জুলাই সকাল আটটায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
বরিশাল মহানগর পুলিশের সার্জেন্ট কিবরিয়াকে শহরের মানুষ শুধু পুলিশ হিসেবে চিনতো না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিস্ট্রি এন্ড কালচার বিভাগের ছাত্র হওয়ার সুবাদে সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও ছিল তার আলাদা পরিচিতি। স্বামী-স্ত্রী দুজনে একই শহরে সার্জেন্ট হওয়ায় পরিচিতিটা আরও ব্যাপক ছিল। ২০১৭ সালে দু’জনেই একসাথে পুলিশে যোগ দিয়েছিলেন। ট্রেনিং একাডেমি থেকেই দুজনের সখ্যতা, তারপর পারিবারিকভাবে বিয়ে। সুখের সংসারে ঘর আলো করে এসেছিল ওহি। কিন্তু সে সুখ আর সইলো না। বরিশাল শহরের আপামর মানুষের প্রিয় সার্জেন্ট কিবরিয়ার মৃত্যুতে আজ শহরে নেমেছে শোকের ছায়া। পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ থানার সুবিদখালী কলেজের ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল জনাব মোঃ ইউনুস আলী সর্দার অবসর গ্রহণের পর একমাত্র পুত্র কিবরিয়া ছিলেন তার অবলম্বন। ছোট দুই বোনের লেখাপড়া আর বৃদ্ধ অসুস্থ বাবা মায়ের শেষ অবলম্বন হারিয়ে ওপেন হার্ট সার্জারি করা বাবা ইউনুস আলী সর্দার বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন। ওহি না বুঝেই মায়ের সাথে কান্না করছে আর বাবাকে খুঁজছে হাজারো মানুষের ভিড়ে। সবার মুখে একই কথা উচ্চারিত হচ্ছে বারবার, “এ শোক নয় সহিবার, এমন মৃত্যুর শোক সইতে কি পারবে তার পরিবার!”
সুত্র:অনলাইন