প্রধানমন্ত্রীর পুরষ্কার পাচ্ছে সৈয়দপুর ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ১৩শিক্ষার্থী
রাকিব হাসান, স্পোর্টস রিপোর্টার: স্কাউটিং এর সর্বোচ্চ পদক “শাপলা কাব অ্যাওয়ার্ড” পেল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, সৈয়দপুর।
২০১৮ এবং ২০১৯ শিক্ষাবর্ষে বাংলাদেশ স্কাউটের সর্বোচ্চ সম্মান সূচক জাতীয় “শাপলা কাব অ্যাওয়ার্ড” পাওয়ার গৌরব অর্জন করেছে ইন্টারন্যাশনাল স্কুল স্কাউট গ্রুপ সৈয়দপুর এর বার্জিস আলী, শামামাহ আলী, রাইয়ান জান্নাত এশা,মো.ফাহিম বিন ফারুক, মোঃ আরিফ বিল্লাহ, মোঃ আবদুল্লাহ মোঃ আব্দুল্লাহ আল শান্ত, মোঃ তৌহিদ মোক্তার মোঃ শিপন হাসান সাফি, সিফাত আফজাল, মোঃ সাদমান শিহাব, রাফিহা তাসনিম রিমু এবং মোঃ আমান উল্লাহ আমান।
মনোনীত কাবরা অতিসত্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করবে।
তাদের এ অর্জন তাদেরকে যেমন আত্মপ্রত্যয়ী করবে, তেমনি দেশ সমাজ ও মানবতার প্রতি অনেক দ্বায়িত্বশীল হতে শেখাবে।
স্কাউটিং এর যাবতীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে শিক্ষার্থীরা যেমন আত্মপ্রত্যয়ী হতে পারে, তেমনি অসহায় ও দুর্ঘটনাকবলিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রশিক্ষণ এবং পরিবেশবান্ধব সমাজ ও দেশ গঠনে প্রেরণা পেয়ে থাকে। যা একজন শিক্ষার্থীকে মানবিক চেতনায় গড়ে উঠতে উজ্জীবিত করে।
রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ বলেছেন, “জীবনে বড় হতে হলে কঠোর পরিশ্রম আর অনুশীলনের বিকল্প নেই। স্কাউটিংয়ের শিক্ষা ব্যক্তি, পরিবার ও সামাজিক জীবনে প্রতিফলন করা গেলে জাতীয় উন্নয়ন ত্বরাণ্বিত হবে।
” আমার মতে স্কাউটিং একজন শিক্ষার্থীকে লেখাপড়ার পাশাপাশি সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে হাতে কলমে শিক্ষা দেয়।
স্কাউটিংকে দেশসেবা ও মানবিক কল্যাণে কাজে লাগাতে হবে। স্কাউট পাঠ্যপুস্তকে সীমাবদ্ধ কোনো বিষয়বস্তু নয়, এটি মূলত মুক্তাঙ্গনের শিক্ষা, যা শিক্ষার্থীদেরকে পাঠ্যক্রমিক শিক্ষার পাশাপাশি বর্তমান মারাত্মক অবক্ষয় ও মাদকাসক্তের অভিশাপে অভিশপ্ত সমাজ থেকে পরিশীলিত জীবন গঠনের শিক্ষা দেয়।
যা গ্রহণ করলে শিক্ষার্থীরা অবক্ষয়মুক্ত থাকার পাশাপাশি প্রকৃত দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবেই গড়ে উঠবে।
একজন শিক্ষার্থীকে “জাতীয় শাপলা কাব অ্যাওয়ার্ড” অর্জনের জন্য বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করতে প্রায় ১৮ মাস লাগে । প্রথম ধাপ হচ্ছে সদস্য ব্যাজ অর্জন।এই ব্যাজ অর্জনের জন্য ৩ মাস নানা ধাপ অতিক্রম করে পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হয়।
এরপর তাঁরাব্যাজ অর্জনের জন্য ৪-৬ মাস নিবিড়ভাবে অংশ নিতে হয় বিভিন্ন স্কাউট প্রশিক্ষণে। তারপর চাঁদব্যাজ অর্জনের জন্য চলে নিবিড় প্রশিক্ষণ। চাঁদব্যাজ অর্জনের পর শিক্ষার্থীদেরকে তৈরি করা হয় চাঁদতাঁরা ব্যাজের জন্য।
এতে তারা আবার ৪-৬ মাস আপন শক্তিসহ নানা শাখা প্রশাখায় প্রশিক্ষণ নেয়।ক্যাম্পিং কার্যক্রমের মধ্যে কাব স্কাউটিং এর পুরো সময় অন্ততঃ ১টি কাব কর্নিভাল, ১টি কাব অভিযান, ২টি কাব হলিডে, ১টি স্কাউটস ও ১টি উপজেলা, জেলা, আঞ্চলিক এবং জাতীয় ক্যাম্পুরীতে অংশগ্রহণ করে নিজেদেরকে শাপলা কাব অ্যাওয়ার্ডের জন্য প্রস্তুত করতে হয়।
সবশেষে শাপলা কাব অ্যাওয়ার্ডের জন্য চলে ৩ মাসের নিরবচ্ছিন্ন অনুশীলন। এ অনুশীলনে সাফল্য অর্জনের পরেই “শাপলা কাব অ্যাওয়ার্ড” এর জন্য মনোনীত হয়।
সেবা’র মূলমন্ত্র নিয়ে ইংল্যান্ডের ব্রাউন সি দ্বীপে রবার্ট স্টিফেনশন স্মিথ লর্ড ব্যাডেন পাওয়েল অব গিলওয়েল প্রতিষ্ঠা করেন স্কাউট আন্দোলন। মাত্র ২০ জন কিশোর বয়সী ছেলেদের নিয়ে প্রথম যাত্রা শুরু হয়েছিল। আজ বিশ্বের ১৬৯টি দেশে স্বীকৃতভাবে ৪০ মিলিয়নের অধিক স্কাউটার রয়েছে। যারা নিরলসভাবে আর্তমানবতার সেবায় কাজ করে যাচ্ছে।
বর্তমানে শুধু বাংলাদেশে ১৭ লাখ স্কাউট রয়েছে।বাংলাদেশে স্বাধীনতার পরপরই ১৯৭২ সাল থেকে স্কাউটিং কার্যক্রম চলছে। বর্তমানে বাংলাদেশে স্কাউট আন্দোলনে জড়িত প্রায় সাড়ে ১১ লাখ কিশোর। পরিসংখ্যানের হিসাবে বাংলাদেশের অবস্থান সারা বিশ্বে পঞ্চম। বাংলাদেশের স্কাউট আন্দোলন তিনটি শাখায় বিভক্ত।
প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৬ থেকে ১০ বছর বয়সীদের জন্য কাব স্কাউটিং। স্কাউট শাখার বয়সসীমা ১১ থেকে ১৬ এবং রোভার স্কাউটদের বয়সসীমা ১৭ থেকে ২৫ বছর। এছাড়া বয়স্ক ব্যক্তিরা প্রশিক্ষণ নিয়ে ইউনিট লিডার বা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এছাড়া সেবার মানসিকতা সম্পন্ন যে কেউই স্বেচ্ছাসেবার ভিত্তিতে স্কাউট আন্দোলনে জড়িত হতে পারেন সব সময়।
অত্র প্রতিষ্ঠানের কাব লিডার ও স্কাউট শিক্ষক নিলুফা ইয়াছমিন (উডব্যাজার) বলেন, তারা যেন এতটুকুতেই থমকে না দাঁড়ায়। পরবর্তীতে অন্যান কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত হয়ে নিজেদেরকে আরো মেলে ধরে। দেশ ও সমাজে অবদান রাখার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করে। ইউনিট লিডার মোঃ আজিমউদ্দিন (উডব্যাজার) বলেন, জাতীয় শাপলা কাব পেয়ে কাব দল আমাদেরকে গর্বিত করেছে।
আমরা আশাবাদী তারা আগামীতেও কঠোর অনুশীলন ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে নিজের মাঝে লুকায়িত প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করবে। ইউনিট লিডার মোছাঃ মোসাররাত (উডব্যাজার) বলেন, ‘আমি সত্যিই আনন্দিত।
পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি স্কাউটস এর বিভিন্ন স্তরবিশিষ্ট প্রশিক্ষণ তাদেরকে আত্মমর্যাদাসম্পন্ন সৎ, চরিত্রবান, কর্মদ্যোগী সেবাপরায়ণ, সর্বোপরি সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবে।বাংলাদেশ স্কাউটস সৈয়দপুর জোনের
ইন্টারন্যাশনাল স্কুল সৈয়দপুর এর সর্বোচ্চ সংখ্যক শিক্ষার্থী “শাপলা কাব অ্যাওয়ার্ড”অর্জন করায় বাংলাদেশ স্কাউটস,সৈয়দপুর রেলওয়ে জেলার জেলা স্কাউট লিডার মোঃ আনোয়ার হোসেন, সহ জেলা কমিশনার মোঃ মোজাহারুল ইসলাম এবং জেলা কাব লিডার মোঃ মামুনুর রশিদ করিম অ্যাওয়ার্ড অর্জনকারী কাব স্কাউট ও ইউনিট লিডারদের অভিনন্দন জানিয়েছেন।
আমার বিশ্বাস এ অর্জন তাদেরকে দেশপ্রেমিক ও মানবতাবাদী নাগরিক হতে অনুপ্রেরণা জোগাবে। পরিশেষে যাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও আন্তরিক সহযোগিতায় এই সাফল্য অর্জন হয়েছে তাদের সকলের প্রতি রইল শুভকামনা।